আহমেদ সারজিল, স্টাফ রিপোর্টার:
সব পাখি ঘরে ফেরে সব নদী…’
জীবনানন্দ দাশ তার বিখ্যাত কবিতা ‘বনলতা সেন’ এ লিখেছেন। সব পাখি হয়তো ফিরে, তবে সব জেলে ঘরে ফেরে না। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ডাকাতের আক্রমণে সবাই ফিরতে পারেনা।
চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন উপজেলা সন্দ্বীপ। চারিদিকে নদীবেষ্টিত এ দ্বীপের যেমন রয়েছে প্রজেক্টের মাছ, ঠিক তেমনি আছে সামুদ্রিক মাছ। বর্তমানে ইলিশ মৌসুমে দ্বীপের চাহিদা মিটিয়ে এক বিরাট অংশ পাঠানো হচ্ছে বাহিরে।
তবে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা এই জেলেরা আজ ভাল নেই। অভাব অনটন আর হয়রানির শিকার হয়ে না খেয়ে দিনানিপাত করছে।
এই যেমন উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নের চৌকাতলী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন। প্রথমে প্রবাসে ছিলেন। সেখানে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে দেশে ফেরত আসেন। বর্তমানে তিনি একজন মৎসজীবী।
আরো পড়ুনঃ স্বর্ণদ্বীপ ফাউন্ডেশন হাসপাতালের শুভ উদ্বোধন
তার ঘুম ভাঙার সময় হয় জোয়ার ভাটার হিসেবে। তিনি সাগরে জাল দিয়ে ইলিশ মৌসুমে মাছ শিকার করেন। বেড়ীবাঁধ থেকে প্রায় ৪ কিঃমিঃ দক্ষিণে চরে জাল লাগিয়েছেন। যখন ভাটা পড়ে যায় তখন পায়ে হেঁটে সে স্থান থেকে জালে আটকা পড়া মাছ নিয়ে আসেন।
বিগত বছর লাভ হলে ও এবছর একটু ভিন্ন এখন পর্যন্ত তিনি লাভের মুখ দেখেন নি, যার কারণ এ বছর মাছের ফলন আগেরবারের তুলনায় অনেক কম। এছাড়াও তিনি যে স্থানে জাল লাগিয়েছেন, জোয়ারের পানিতে অনেক সময় কাঁদা আসে, বড় কোন খুটি না থাকায় পলি জমে জাল মাটিতে গেথে যায় কিংবা কখনো কখনো আপনা আপনি ছিঁড়ে যায়।
অথবা দুষ্কৃতিকারীরা জোয়ারের সময় তার জালের উপর বোট তুলে দিয়ে নোঙ্গর ফেলে ফুল স্পীডে বোট চালিয়ে জাল টেনে নিয়ে যায়।সবমিলিয়ে তিনি এখনো একটু লাভের আশায় বার বার জাল কিনে সাগরে লাগাচ্ছেন।
নিজাম উদ্দিন ৫ সন্তানের বাবা। তিনিই তার পরিবারের অর্থ উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন। নিজাম উদ্দিন বলেন, আমি আমার সব অর্থ এই সাগরে বিলীন করেছি শুধু মাত্র পরিবার নিয়ে সুখে থাকবো এই ভেবে। ধার-দেনা ও হয়েছে অনেক। যদি মাছ পড়ে তাহলে ধার-দেনা কোন বিষয় না।কিন্তু আমাদের এত পরিশ্রম এর পর ও আমরা সফল হতে পারিনা।কখনো প্রকৃতি আমাদের বিরুদ্ধে বা কখনো মানুষের অমানবিকতা।আমরা কই যাবো?
মাঝে মাঝে রাতেরবেলা ও ঝড় বৃষ্টি বর্জপাত ও হয় তখন ও আমাদের চলে যেতে হয় সাগরে।মাঝে মাঝে চোরাবালিতে ও দূর্ঘটনার স্বীকার হতে হয়। এককথায় জীবীকা নির্বাহের জন্য আমরা আমাদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে চলাচল করি।
নিজাম উদ্দিন আরো বলেন, আমার মতো আরো অনেকে সাগরে জাল দেয় তাদের ও ক্ষতি হয়। কিন্তু আমরা প্রশাসনিকভাবে কোন সহায়তা পায় না। কারণ আমাদের বিষয়টি অনেক তুচ্ছ। আমাদের ইঞ্জিন চালিত নৌকা নেই। আমরা জানি কতটা পরিশ্রম করে মাছ ধরে আনতে হয়।
প্রত্যেক অবরোধের আগে জেলেদের চাল দেওয়া হয়, যাতে সাগরে মাছ না ধরে,আমরা সেই সহায়তা ও পাই না। যখন অবরোধ চলে তখন আমরা বেকার বসে থাকি অলস জীবন যাপন করি।
সর্বশেষ নিজাম উদ্দিন বলেন, তবে এবার আস্তে আস্তে কিছুটা লাভের মুখ দেখছি। যদি ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাঝিরা আমাদের জাল নষ্ট না করতো, তাহলে আরো আগে থেকে আমরা দূর্বিষহ জীবন কাটিয়ে উঠতাম।
বর্তমানে এই অঞ্চলে প্রায় ৪০ জন মৎসজীবী রয়েছে, তারা সকলেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন একবার হলেও। তাই সরকার এর কাছে দাবি, সমুদ্রগামী জেলে তো বটেই, সব মৎস্যজীবীর জীবনমান উন্নয়নে শুধু খাদ্য সহায়তা নয়, আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসতে হবে।
সন্দ্বীপ জার্নাল/এএস