• মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন

করোনা র একি কাল !!

সন্দ্বীপ জার্নাল ডেস্ক: / ৫৯২ ৪ ৯
আপডেট: বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২০
করোনা র একি কাল !!
ইশতিয়াক আহমেদ মেহরাজ সন্দ্বীপ জার্নাল

ইশতিয়াক আহমেদ মেহরাজ:


করোনা র একি কাল !! পথ ঘাট খালি রাখতে সবার কত প্রচেষ্টা । কিন্তু ঘরে থাকলেও পেট তো আর মানেনা । এমন অনেক পরিবার রয়েছে , যারা মুখ খুলে বলতে পারছেন না ঘরে খাবার নেই । সেসব পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেয় “দশ টাকার সদাই” নামে একটি ভ্রাম্যমান সংগঠন । তাদের হটলাইনের ফোনের সূত্র ধরেই পরিচয় গোপন রেখে সন্দ্বীপের নানা প্রান্তে মধ্যবিত্তের দরজায় খাদ্য পৌঁছে দেন তারা । এখন পর্যন্ত সহায়তা দিয়েছেন ৫শর ও বেশি পরিবারকে । ফান্ড গোছানোর কাজও তারাই করছেন ।

দশ টাকার সদাইয়ের অন্যতম সদস্য সমাজকর্মী ও তরুণ সাংবাদিক জাহিদ হাসান শাকিল জানান, আমাদের হট লাইনে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ টি কল আসে, এরা সবাই মধ্যবিত্ত মানুষ এরা কেউ খেতে খাওয়া মানুষ না । এরা লজ্জায় কাউকে বলতে পারেনা । গতকাল পর্যন্ত ৪৫ – ৫০ টি পরিবারে সহায়তা পৌঁছে দিতে পেরেছি এর আগেও অন্য একটি ফান্ড থেকে ৩০০+ পরিবারে সহায়তা দিয়েছি । চাহিদা অনুযায়ী সাহায্য দিতে আমাদের প্রায় ১২ লাখ টাকার প্রয়োজন । সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা ফান্ড সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছি ।

করোনা দুর্যোগ যত দীর্ঘ হচ্ছে সমাজে ততই কমছে মধ্যবিত্তের সংখ্যা । হত দরিদ্ররা কারো কাছে সহায়তা চাইতে পারলেও মধ্যবিত্তের সেই উপায় নেই । সরকারি হিসেব বলছে , এই অবস্থা যদি চলে থাকে তাহলে দু মাসের মধ্যেই অনেক মধ্যবিত্ত যোগ হবে দরিদ্রের খাতায় । পরিকল্পনা রয়েছে ৩০ শতাংশ জমানুষকে সহায়তার আওতায় নিয়ে আসার ।

যদিও এমন বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন “দশ টাকার সদাই” সদস্যদের মতো  অনেকেই । গেল কিছুদিন সাংসদ মিতা সন্দ্বীপের প্রতিটি ইউনিয়নের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন । সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে তালিকানুযায়ী প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন ভালোবাসার উপহার ।

সমাজকর্মী আবদুল কাদের মিয়া, নুরুল মোস্তফা খোকনও নিজস্ব অবস্থান থেকে মানুষে পাশে দাঁড়িয়েছেন । নীরব নিভৃতে মানুষের পাশে আছেন মগধরা ইউপি চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন । গত কাল আওয়ামীলীগ নেতা মোক্তাদের মাওলা সেলিম মধ্যবিত্তদের কাছে কিছু খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন ।

এছাড়াও জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে সন্দ্বীপ থানা পুলিশ কিছু সহায়তা দিয়েছেন । সশস্ত্রবাহিনীকেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে ।

কিন্তু সাড়ে ৪ লক্ষ মানুষের এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে মানুষ কেমন আছে ?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্দ্বীপের পশ্চিম বেড়িবাঁধ এলাকায় সল্প পরিসরে কিছু ত্রাণ পৌঁছালেও দক্ষিণ পূর্ব এলাকায় তেমন কোনো সহায়তা সেভাবে পৌঁছায়নি । সেসব এলাকার মানুষ জানেইনা করোনা কি , কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে সমাজের । সচেতনতার বালাই নেই ।

মগধরা ৮ নং ওয়ার্ড এলাকার বেড়িবাঁধ এলাকার একজন বাসিন্দার বলছেন, দেশে করোনা এসেছে । হয়তো আমরা বেড়ির লোকজন করুণায় মরবোনা তবে খাদ্যাভাবে মৃত্যু নিশ্চিত । করোনার সচেতনতা না পৌঁছালেও চালের দাম যে বেড়েছে সে খবর পৌঁছে গেছে । খাল থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে খাই , বিকেলে কিছু মাছ ধরি বাজারে যেতে সন্ধ্যা হয় বাজার তো পাই নি উল্টো ধমক খেয়ে ফেরত আসতে হয়েছে । 

১১৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর পুরো পরিবারকে হারিয়েছেন রিনা বেগম নামে এক গৃহিনী । তিনি জানান , পশ্চিম বেড়িতে বাপের বাড়ি ছিল , বন্যায় মা ভাই চলে গেছে । আমার বিয়ে হয় পূর্ব বেড়ি । সারাজীবন জমিয়ে একটা ছোট ঘর করেছি সেটাও নতুন বেড়ির জন্য রেখে দিয়েছে বিনিময়ে পেয়েছি মাত্র ১০ হাজার টাকা । অসুস্থ স্বামী , ছেলে মেয়েদের নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটছে , চালের দামও বেড়েছে – দুধ বিক্রি করে যে টাকাটা পাই সেটা দিয়ে এক কেজি চাল কিনলে আর কোনো টাকা থাকেনা । আমাদের সাহায্য করারও কেউ নাই ।

আজ ২৯শে এপ্রিল, ১৯৯১ সালের এই দিনের কথা এখনো ভুলতে পারেনি সন্দ্বীপের উপকূলের মানুষ । কেউ সপরিবারে , কেউ সহায় সন্তান হারিয়েছে আবার কেউ পুরো সাজানো পরিবার হারিয়ে ভাগ্যক্রমে একাই বেঁচে আছে ।

একই সময়ে এই লকডাউনে আর্থিক রোজগারের কোনো ব্যবস্থা নেই উপকূলের এই মানুষ গুলোর । প্রতিবছর এসময় সবাই নিজেদের ভাঙাচোরা ঘরটা মেরামত করতে হয় , অনাগত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করার উপযোগী করতে হয় । এবার আর্থিক সংকটের কারণে অনেকেই ঘরটা মেরামত করতে পারছেননা , অথচ মেরামত না হলে যে কোনো ধমকা বাতাসেই উড়ে যেতে পারে সাধের ঘরটি ।

সন্দ্বীপ জার্নাল/ইএএম


Skip to toolbar