• বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৩ অপরাহ্ন

প্রবাসীদের কর্মঘণ্টায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে টিকটক–ফেসবুক আসক্তি

সন্দ্বীপ জার্নাল ডেস্ক: / ৪৬ ৪ ৯
আপডেট: শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫
প্রবাসী

টিকটক ও ফেসবুক শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়—অনেকের চোখে এখন এটি সহজ আয়ের সুযোগ। প্রবাসী বাংলাদেশীদের একটি অংশ তাই কাজের বাইরে নয়, বরং কাজের মাঝেই ভিডিও বানানো, লাইভ করা আর কনটেন্ট তৈরিতে জড়িয়ে পড়ছেন। এই অতিরিক্ত আগ্রহ ধীরে ধীরে তাদের কর্মঘণ্টা, মনোযোগ এবং সামগ্রিক কর্মক্ষমতার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে।

কঠোর সময়সূচি, শারীরিক পরিশ্রম আর দায়িত্বপূর্ণ কাজের ফাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য সময় বের করতে গিয়ে অনেকে ভুগছেন ক্লান্তি, ঘুমের অনিয়ম, মনোযোগের ঘাটতি ও কাজে ভুলের সমস্যায়। ফলে টিকটক–ফেসবুক নির্ভর ইনকামের মোহ পেশাগত স্থিতিশীলতার জন্য একটি ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে অনেক প্রবাসী প্রতিদিনের কাজের অভিজ্ঞতা ভিডিওতে তুলে ধরে নিয়মিত পোস্ট করছেন। কেউ কেউ ওভারটাইমের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সেই সময় কনটেন্ট তৈরিতে ব্যয় করছেন—ফলে আয় কমছে, দক্ষতা ঘাটতি বাড়ছে, আর নিয়োগকর্তাদের কাছে বাংলাদেশীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, কর্মক্ষেত্রে বা কর্মঘণ্টায় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার এখন নিয়োগকর্তাদের কাছে “নেতিবাচক আচরণ” হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, অনেক প্রবাসী এখন কর্মস্থলেই সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট তৈরি করছেন, যা আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এতে কর্মক্ষমতা কমছে, কাজের ক্ষতি হচ্ছে, আর নিয়োগকর্তাদের চোখে কর্মীদের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। তার মতে, প্রবাসী কর্মীদের জন্য যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হয়, সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ঝুঁকি নিয়েও সচেতনতা তৈরি জরুরি। বিএমইটি ও টিটিসির প্রশিক্ষণেও এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

কিছু ব্যতিক্রম অবশ্য রয়েছে। টিকটকে ভাইরাল হয়ে দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছেন মানিক মিয়া—টাঙ্গাইলের এই তরুণ সৌদি আরবে ফেলে দেওয়া জিনিস বিক্রির ভিডিও করে রাতারাতি পরিচিত হন, দেশে ফিরে হেলিকপ্টারে বিয়েও করেন। তবে এমন সাফল্য সীমিত, আর তা দেখে অনেক প্রবাসী বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রত্যাশা তৈরি করছেন।

গালফ ও মালয়েশিয়ায় কর্মরত অনেকেই জানাচ্ছেন, কাজের পর ভিডিও বানানো বা অনলাইন বিনোদনে সময় ব্যয় করার কারণে ওভারটাইম করা হয় না, ফলে আয়ও কমে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার অনলাইন গেম বা জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন—যার ফলে দেশে টাকা পাঠানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি শ্রমিক বিদেশ যাচ্ছেন, যার বড় অংশই স্বল্পদক্ষ। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বেতন পাওয়ার জন্য তাদের ওভারটাইম ও স্থায়ী দক্ষতার ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি অতিরিক্ত সময় ব্যয় তাদের আর্থিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করছে।

বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করলেও স্বীকার করছেন—টিকটক–ফেসবুক আসক্তি কাজের পরিবেশ এবং নিয়োগকর্তাদের ধারণায় বাস্তব প্রভাব ফেলছে।

এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও বিশেষজ্ঞদের ধারণা—প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্কৃতি যদি এভাবে বদলে যায়, ভবিষ্যতে বিদেশি শ্রমবাজারে বাংলাদেশীদের অবস্থান দুর্বল হতে পারে। তাই এখনই সচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি।


Skip to toolbar