• শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন

একগুচ্ছ পরিবর্তন আসছে পাঠ্যবইয়ে: ফিরছে ভাসানী-জিয়া, বাদ যাচ্ছে হাসিনা

সন্দ্বীপ জার্নাল ডেস্ক: / ৩৪২ ৪ ৯
আপডেট: বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৪
ভাসানী-জিয়া

আগামী বছরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আসছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বইয়ে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি যুক্ত হচ্ছে। বাদ দেওয়া হচ্ছে বইয়ের প্রচ্ছদে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত উক্তি।
বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসে যার যা ভূমিকা তা সেভাবে সন্নিবেশিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ জিয়াউর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী-যার যা ভূমিকা এগুলো ইতিহাসের অংশ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে নিহত আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধদের ‘বীরত্বগাথা’ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই পরিমার্জন করে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হবে। স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক পর্যায়ের ১ কোটি ৮৯ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ২৩ কোটি কপি বই ছাপানো হচ্ছে। আর একগুচ্ছ পরিবর্তন নিয়ে নতুন পাঠ্যবই হাতে পাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকার পাঠ্যক্রম ও শিক্ষা পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছিল। নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়া হয়েছিল। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আনা হয়েছিল পরিবর্তন। এ ছাড়া নবম শ্রেণিতে বিভাগ পছন্দের সুযোগ নেই। এর বদলে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিভাগে পড়তে পারবে। নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ষান্মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে বিগত সরকারের শিক্ষা প্রশাসন।
আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলে আসছিলেন, শিক্ষার্থীদের আনন্দময় পরিবেশে পড়ানোর পাশাপাশি মুখস্থনির্ভরতার পরিবর্তে দক্ষতা, সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে শেখাতেই নতুন এই শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। তবে আলোচিত এই শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পরীক্ষার আগের রাতে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁস হয়। এমনকি ইউটিউবে এসব প্রশ্নের সমাধানও পাওয়া গেছে। এ নিয়ে অভিভাবকরা তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা সরকার পরিবর্তনের পর বিতর্কিত শিক্ষাক্রম বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পুরোনো পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষাক্রম চলবে, এতে পরীক্ষাপদ্ধতি থাকবে।
দায়িত্ব নেওয়ার পরেই তিনি বলেছিলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তৈরি করা শিক্ষাক্রম ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’। এরপরেই পাঠ্যবইয়ের সংস্কার শুরু করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে-জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের অধ্যায় গ্রাফিতি। বাংলা, ইতিহাস, বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বইয়ের মতো কিছু বইয়ের প্রচ্ছদে বা বইয়ের কোনো কোনো অংশে এসব গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি যুক্ত করা হবে। জুলাই অভ্যুত্থান আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে দেয়ালচিত্রকে বেছে নেয়। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরও পুরো ঢাকা শহরের বিভিন্ন দেয়ালে শিক্ষার্থীরা গ্রাফিতি আঁকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বহু ভবনের দেয়াল, সীমানাপ্রাচীর, সড়কদ্বীপ, মেট্রোরেলের স্তম্ভ, উড়াল সড়কের স্তম্ভ কোনো কিছুতেই নিজেদের অর্থে গ্রাফিতি আঁকতে বাদ রাখেনি শিক্ষার্থীরা। এসব গ্রাফিতিতে ওই সময়টুকুকে ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। অভ্যুত্থানে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রাফিতিতে। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, রাষ্ট্র-সমাজের সংস্কার, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, স্বৈরতন্ত্রের অবসান, বাকস্বাধীনতা, অধিকার নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আর প্রতিরোধের উক্তি ফুটে উঠেছে এসব গ্রাফিতিতে।
পাঠ্যবইয়ের পেছনের মলাটে শেখ হাসিনার নানা বাণী রয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা নামের বইয়ের পেছনের মলাটে লেখা আছে, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন-দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলো-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং নবম শ্রেণির গণিত বইয়ের পেছনে লেখা আছে, ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য যোগ্যতা অর্জন করো-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’। এত দিন ধরে চলা পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা শেখ হাসিনার ছবি ও তার এসব উদ্ধৃতি বাদ যাচ্ছে। বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে শেখ হাসিনার উদ্ধৃতির পরিবর্তে চিরন্তন কিছু বাণী যুক্ত করা হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এনসিটিবি বলছে, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ইতিহাসনির্ভর বিষয়ে যার যা ভূমিকা তা উপস্থাপন করা হবে। নতুন বইতে যুক্ত হবে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী ও জিয়াউর রহমানের মতো অন্যদের অবদানও।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে গত ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ নিহত হন। পুলিশের গুলির বিপরীতে বুক পেতে দাঁড়িয়ে যান তিনি। বিভিন্ন ভিডিওতে পুলিশ গুলি করার পর সাঈদকে ঢলে পড়তে দেখা যায়। পরে মারা যান তিনি। এ আন্দোলনে ঢাকায় ১৮ জুলাই নিহত হয়েছেন এমন একজন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ছাত্র মুগ্ধ উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।আন্দোলনকারীদের পানি সরবরাহ করছিলেন মুগ্ধ। উত্তরাতেই বাসা তার। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তার বলা ‘পানি লাগবে, পানি, পানি লাগবে, পানি’ এ উক্তি পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের প্রধান স্লোগানে পরিণত হয়। জুলাই অভ্যুত্থানে আবু সাঈদ ও মুগ্ধদের নতুন গল্প যুক্ত করা হবে।
 এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ইতিহাসে যার যেমন ভূমিকা সেভাবেই সেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার ইতিহাসে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের বিষয় যুক্ত হচ্ছে। বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় থাকা শেখ হাসিনার উক্তিগুলোকে অপ্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেগুলো থাকবে না। সেগুলো অপ্রাসঙ্গিক। শিক্ষার্থীদের মনে যাতে রাজনৈতিক কোনো ধারণার উদ্রেক না হয় সে কারণে এসব বাদ দেওয়া হচ্ছে।
বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে শেখ হাসিনার উদ্ধৃতির পরিবর্তে চিরন্তন কিছু বাণী যুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে নিহত আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধদের ‘বীরত্বগাথা’ অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে তিনি জানান।


Skip to toolbar