সন্দ্বীপে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে নতুন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আসলাম খানের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে প্রকাশ্যে মাতলামি, ধূমপান ও অশালীন আচরণে লিপ্ত হচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে তাকে প্রকাশ্যে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে মূত্রত্যাগ করতেও দেখা গেছে। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ দাবি এবং বিগত সময়ে দায়িত্ব পালন করা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও (ইউএনও) অসম্মান করার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নতুন শিক্ষা অফিসার আসলাম খান দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই অফিস কম্পাউন্ডে প্রকাশ্যে ধূমপান করেন, কখনও মাতাল অবস্থায় অফিসে আসেন।
শিক্ষকদের একাধিক জনের অভিযোগ, তিনি সভা-মিটিংয়েও নারী পুরুষ সবার সামনে ধুমপান এবং মহিলা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে অশালীন মন্তব্য ও ‘বিয়ের প্রস্তাব’ পর্যন্ত দেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, মাসখানেক আগে যোগদান করা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তার অফিসের সামনেই ‘ইউএনও চ্যাম্পিয়ন, ইউএনও চ্যাম্পিয়ন’ বলে চিৎকার করছেন । এসময় তার পরনে কোন পোশাক ছিলোনা ।
অন্য আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি অসংলগ্ন আচরণ করছেন, “বক্তব্য নিতে মদ খেয়ে আসতে হবে” “এক মিনিটে আমি হত্যা করতে পারি, অত সময় নেই না” অসংলগ্ন আচরণ সহ প্রকাশের অযোগ্য গান শব্দ ব্যাবহার করছেন।
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে একটি দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট জানান, “আমার চাকরিজীবন প্রায় শেষের দিকে, ৫৫ বছরের চাকরিজীবনে আমি এমন শিক্ষা অফিসার আর কখনো দেখিনি। গত ২১ তারিখ উনি আমার মাদ্রাসায় আসেন এবং প্রায় জোরপূর্বক ১ হাজার টাকা নিয়ে যান, কেনো এসেছেন, কেনো টাকা নিলেন তার কিছুই আমরা জানিনা ।”
আরেকটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, “উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রথম পরিচয় পর্বের সভায় যেভাবে দুর্ব্যবহার ও অশালিন আচরণ করেছেন, এধরণের নৈতিক দুর্বলতা নিয়ে কিভাবে ৪১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেখাশোনা করবেন আমার জানা নেই”
এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের এমন আচরণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই প্রতিবাদ করছেন সন্দ্বীপ কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি নিঝুম খাঁন। তিনি বলেন, “একজন প্রধান শিক্ষিকাকে অশালীন আচরণ ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে সকল নৈতিকতার মান হারিয়েছেন। আমরা ২৭ স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষক গন িএই বিষয় নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়েছি। তিনি আমাদের িএকটা লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন । আমরা আগামী রবিবার লিখিত অভিযোগ দাখিল করবো ।”
একাধীক শিক্ষক ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, “একজন শিক্ষা কর্মকর্তার মূল দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পরিবেশ ও শিক্ষকের প্রতি নৈতিক নেতৃত্ব প্রদর্শন করা। যখন একজন কর্মকর্তা মাতলামি, প্রকাশ্যে ধূমপান ও নারী সহকর্মীদের প্রতি অশালীন আচরণে লিপ্ত হন, তখন সেটি শুধু ব্যক্তিগত সমস্যা নয়; এটি পুরো শিক্ষাঙ্গনের নৈতিক শৃঙ্খলাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। নৈতিক দিক থেকে এই আচরণ শিক্ষকের কাছে শিক্ষা প্রদানের আদর্শ ও শিক্ষার্থীর বিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সন্দ্বীপ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আসলাম খানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজী নন বলে জানিয়েছেন।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় রাত ১০ টায় সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি, তবে সন্দ্বীপের একজন স্থানীয় সংবাদকর্মীর বরাতে জানা গেছে, “উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মংচিংনু মারমা বিষয়টি অবগত আছেন, গত সপ্তাহে একাধিক মৌখিক অভিযোগ তিনি আমলে নিয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নজরে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইএএম/সন্দ্বীপ জার্নাল