• বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২১ অপরাহ্ন

মুরগীর ডিম ফুটে হাঁসের বাচ্চা

সন্দ্বীপ জার্নাল ডেস্ক: / ৬০০ ৪ ৯
আপডেট: রবিবার, ১৭ মে, ২০২০
মুরগীর ডিম ফুটে হাঁসের বাচ্চা
মুরগীর ডিম ফুটে হাঁসের বাচ্চা

মুরগীর ডিম ফুটে হাঁসের বাচ্চা- ছোটগল্প
নদীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে হয় না কয়েকদিন ধরে। মা-বাবা জাগার আগেই উঠে পরে সে। দরজা খোলে আস্তে আস্তে।চারপাশে আবছা অন্ধকার। সূর্য উঠেছে নদীর ওপাড়ে। বাঁশগাছের ফাঁক দিয়ে চিকচিক করছে লাল আলো।
দরজা খুলে নদী গেলো রান্নাঘরে।রান্নাঘরের মাচার উপর ডিমে তা দিচ্ছে মুরগী। ডিম ফুটে বাচ্চাও বেরিয়েছে কয়েকটা। কিচকিচ শব্দ শোনা যাচ্ছে।প্রতিদিন নতুন নতুন বাচ্চা দেখার লোভে ঘুম থেকে উঠে যায় নদী।
লুকিয়ে লুকিয়ে মুরগী দেখার ঘটনাটা মা- বাবার একজনও জানে না। সাত বছর হওয়ার পর আলাদা রুমে থাকে নদী।
মাচাটা অনেক উঁচুতে। মা-র নাগাল পেতেও কষ্ট। নিঃশব্দে চেয়ারটা আগলে নদী রান্নাঘরে আনলো। চেয়ারের এক পা সামান্য ছোটো। কাঁচা দাঁতের মতো কাঁপে।চেয়ারের উপর দিতে হয় মোড়া। মোড়ার উপরে উঠে দাঁড়ালে দেখা যায় মুরগীটা।
চেয়ার-মোড়ার মইয়ে দাঁড়ানো ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মুরগীটার সামনে গিয়ে দিতে হয় আসল পরীক্ষা। ডানার আড়ালে ডিম-বাচ্চা ঢেকে তা দিচ্ছে মুরগী। ছায়ামূর্তির মতো নদীকে দেখেই ফণা তোলা গোখরা সাপের মতো পালক ফুলিয়ে ফোৎ করে উঠলো। চমকে উঠতেই পায়ের নিচের মোড়াটা সামান্য সরে গিয়ে নদী প্রায় পড়েই যাচ্ছিলো। নিজেকে সামলে মাচাটা আকড়ে ধরে কোনরকম রক্ষা পেলো।
ফোৎ ফোৎ করেই যাচ্ছে মুরগীটা। এক হাতে মাচা ধরে অন্য হাতে সাপুড়ের মত মুরগীটাকে খেল দিচ্ছে নদী। বারবার দাঁড়িয়ে ফুলে ফুলে ঠোকর দিতে এগিয়ে আসছে। আলগা হয়ে যাচ্ছে পাখা। এই সুযোগে পাখার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বাচ্চাগুলো দেখে নিচ্ছে নদী।
কী সুন্দর তুলতুলে বাচ্চা। কিচকিচ শব্দ করছে। কতগুলো ফুটেছে, কতগুলো আবার ডিমের ভেতর থেকে মাথাটাই বের করেছে সবেমাত্র। দেখতে দেখতে হঠাৎ খটকা লাগলো নদীর। সবগুলো একই রকম বাচ্চার ভেতর একটা বাচ্চা দেখতে সম্পুর্ণ অন্যরকম। রঙ আলাদা, মুখের গড়ন আলাদা, শব্দটাও ভিন্নরকম। আবছা আলোতে এরকম হচ্ছে না তো।ভালো করে দেখার জন্য মুরগীটার আরো কছে গেলো নদী। পাখনা আলগা হতেই দেখলো, মুরগীর বাচ্চাগুলোর ভেতরে চুপ মেরে বসে আছে শান্তশিষ্ট একটা হাঁসের বাচ্চা।
বিষ্ময়ের সীমা রইলো না নদীর। মুরগীর বাচ্চার সঙ্গে হাঁসের বাচ্চা! মুরগীরর ডিম থেকে হাঁসের বাচ্চা বেরুল কিভাবে! দ্রুত পায়ে মাচা থেকে নেমে আসলো নদী।চেয়ার-মোড়াটা না সরিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে এসে ঢুকলো মা-বাবার রুমে।তারা তখন ঘুমাচ্ছেন। খাটে উঠে মাকে ডাকতে শুরু করলো নদী।
আচমকা ঘুম ভেঙ্গে লাফিয়ে উঠে নদীকে জড়িয়ে ধরলেন মা। ভাবলেন, ভয় পেয়েছে মেয়েটা। বাচ্চা মেয়েকে একা থাকতে দেয়াটা উচিত হচ্ছে না। কাল থেকে নিজেই সঙ্গেই রাখবেন। আলিঙ্গন থেকে বেরিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে মাচার কাছে নিয়ে এলো মা-কে। উত্তেজনায় কথা বলতে পারছে না নদী। মাচার উপর মুরগীর বাসাটার দিকে আঙুল তুলে ভাঙা ভাঙ্গা গলায় বললো, মা, দেখ, দেখ, মুরগীর ডিম থেকে একটা হাঁসের বাচ্চা বেরিয়েছে।
মা প্রথমে ভেবেছিলেন কী না কী। নদীর  কথা শুনে ফিক করে দিলেন। তা দেয়ার সময় সাতটা মুরগীর ডিমের সঙ্গে দুইটা হাঁসের ডিমও দিয়েছিলেন তিনি। হাঁসের বাচ্চা ফোটাতে হয় মুরগীর তা দিয়ে।নদীকে বলতে যাবেন বুঝিয়ে, মাচার পাশে মোড়া-চেয়ারের দিকে চোখ পড়লো মা-র।নিজে নিজে এতো উপরে উঠে মুরগীর বাসায় উঁকি দিয়েছে নদী। পড়ে গেলে কি সর্বনাশই না হতো। সবাই ঘুমে। মাথা ফেটে অজ্ঞান পড়ে থাকতো মেয়েটা। বুকটা ধক করে উঠলো। নদীকে বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরলেন মা।
লেখকঃ সাজিদ মোহন
সন্দ্বীপ জার্নাল/ইএএম


Skip to toolbar