দারা অর্জুন নামের দুই ভাই বহুদিন যাবৎ লাপাত্তা। প্রথমে দারাকে বাঙাল মুলুকের ভুলুয়া (বর্তমানে নোয়াখালী) পরগনায় পাঠানো হয়েছিল খাজনা আদায়ের জন্য।বহূ সংবাদের পরেও সে যখন আসল না, তার তত্ত্বতালাশিতে পাঠানো হলো আরেক ভাই অর্জুনকে। বহূদিন পার হলো। সেও আর ফিরে আসলো না।
বাদশা আলমগীর তখন ভারতবর্ষের অধিপতি। দুই ভাইয়ের অমন উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় তিনি বেজায় রাগ হলেন।একদা দিল্লির মসনদে উপবেশনপূর্বক বিমর্ষ বদনে বলে উঠলেন, এখানে এমন কে আছ, যে অবিলম্বে বাঙালমুলুকে যাইয়া ঐ দুই বেইমানকে পাকড়াও করিয়া লইয়া আসিবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন মোগল নৌবহরের কমান্ডার দেলোয়ার খাঁ। সম্পর্কে বাদশার ভাগিনা। বীরের মত গর্জে উঠলো দেলোয়ার। বলল, শাহনেশান মামুজান, আপনার আদেশ পাইলে আজই আমি হুগলি রওয়ানা হইব। হুগলি হইতে নৌযান লইয়া ভুলুয়ায় গিয়া বেইমান দুই ভাইকে কয়েদ করিব।
অনুমতি মিলল। যথাসময়ে দেলোয়ার খাঁ নৌবহর নিয়ে হূগলি থেকে ভুলুয়ায় পৌছুলেন। গোপনে গোপনে দুই ভাই কিন্তু সব খবরই রাখছিলো। সুযোগ বুঝে ভুলুয়া থেকে তারা পালিয়ে গেলো সন্দ্বীপ।দেলোয়ার খাঁও পিছু নিলেন। নৌবহর ভাসালেন সন্দ্বীপের দিকে। দুই ভাই এবার সন্দ্বীপ থেকে পালিয়ে গেলো দূরে কোথাও।
সাগর ঘেরা সন্দ্বীপের বুকে নেমেই মনটা কেমন যেন করে উঠল দেলোয়ার খাঁর।চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। সহজ সরল লোকজন। খুব নিরাপদ এই স্থান জীবন কাটানোর জন্য অতি উত্তম। দ্বীপের উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম মেপে ঠিক মাঝখানে তৈরী হল কিল্লাবাড়ি। নৌবহরের প্রবীণ দোভাষী বকশি খাঁ।দেলোয়ার খাঁর সঙ্গে তিনিও চাইলেন, জীবনের শেষ কটা দিন এই দ্বীপেই তার সময় কাটুক। বর্তমান মুছাপুর গ্রামের সর্দারের- গো- পুরান বাড়িতে তৈরী হলো তার বসতভিটা।
একদিন বাড়ির সামনের পুকুর পাড়ে বকশি খাঁ তার নয় দশ বছর বসয়ী পুত্র শমসের খাঁর সঙ্গে বসে আছেন। এমন সময় একজন নিচু জাতের লোক তার সঙ্গে বেয়াদপি করল। রেগে গিয়ে বকশি খাঁ তাকে এক চড় মারলেন। লোকটি নালিশ করতে গেলো দেলোয়ার খাঁর কাছে। দেলোয়ার খাঁর আরেক নাম দিলাল রাজা। তার বিচার ব্যবস্থা ছিলো এমন- যখন কোন স্থানে ঝগড়া বিবাদ হবে, একপক্ষ যদি বলে, আমি নালিশ করতে যাচ্ছি, অন্যপক্ষ সাক্ষিসহ ঐ স্থানে অবস্থান করবে, কোথাও যেতে পারবে না; যতক্ষন না পর্যন্ত পাল্কিতে চেপে দিলাল রাজা সেই স্থানে এসে বিচার করবেন।