• মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১৩ অপরাহ্ন

আক্রান্তদের ৯৫ ভাগই ম্যালেরিয়ার ওষুধ প্রয়োগে সুস্থ হচ্ছেন

সন্দ্বীপ জার্নাল ডেস্ক: / ৫০১ ৪ ৯
আপডেট: মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০
আক্রান্তদের ৯৫ ভাগই ম্যালেরিয়ার ওষুধ প্রয়োগে সুস্থ হচ্ছেন
আক্রান্তদের ৯৫ ভাগই ম্যালেরিয়ার ওষুধ প্রয়োগে সুস্থ হচ্ছেন

চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের ৯৫ ভাগই ম্যালেরিয়ার ওষুধ প্রয়োগে সুস্থ হচ্ছেন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) চলছে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা। দুই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কারও মৃত্যু হলেও সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২৪ জন।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা শুরুর আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে তাদের প্রাণে বাঁচানো যেত বলেও মনে করেন তারা।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত একজন শনাক্ত হন। এরপর থেকে মঙ্গলবার (৫ মে) পর্যন্ত চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১১০ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৪ জন, মারা গেছেন আট জন। আক্রান্ত হয়ে ও করোনার উপসর্গ আছে— এমন ১৪৯ জন হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন। সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে ২১ জন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এবং তিন জন বিআইটিআইডিতে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সূত্রমতে, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যে আট জনের মৃত্যু হয়েছে তার মধ্যে ছিল পটিয়ার এক শিশু। শনাক্তের পর জেনারেল হাসপাতালে আনার ২০ মিনিটের মধ্যেই সে মারা যায়। শনাক্ত হওয়ার পর আরেক বৃদ্ধকেও জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। বাকিদের বেশিরভাগেরই নমুনা শনাক্তের আগেই মৃত্যু হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও ফোকাল পারসন ডা. মো. আব্দুর রব জানান, চার ধাপে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে শরীরের উপসর্গ বিবেচনায় নিয়ে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল, কাশি-শ্বাসকষ্ট থাকলে ইনহেলার-অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, এজিথ্রোমাইসিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ৫০০ মিলিগ্রাম প্রথম দিন একটি দেওয়া হচ্ছে। এরপর দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত ২৫০ মিলিগ্রাম করে দিনে তিন বার দেওয়া হচ্ছে।

তৃতীয়ত, আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের পর হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দিয়ে শুরু হচ্ছে ১০ দিনের মূল চিকিৎসা। প্রথম দিন দুইটি করে সকালে ও রাতে দুই বার দেওয়া হচ্ছে। বাকি ৯ দিন একটি করে দিনে তিন বার।

আবার যাদের শ্বাসকষ্ট বেশি এবং রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়, তাদের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আবার বেশি জটিল রোগীতের নেওয়া হচ্ছে আইসিইউতে, আর হৃদরোগের জন্য ব্যবহৃত এনোক্সাপেরিন ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে নাভির নিচে দিনে একটি করে মোট পাঁচ দিন।

আব্দুর রব বলেন, ‘করোনার চিকিৎসার জন্য যেহেতু এখনো শতভাগ সুনির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি পাওয়া যায়নি, আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাইডলাইন মেনে সমন্বিত একটি পদ্ধতি ফলো করছি। অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছি, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন দিচ্ছি এবং অক্সিজেন ও আইসিইউ সাপোর্টসহ এনোক্সাপেরিন ইনজেকশন ব্যবহার করছি।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের এই সিনিয়র কনসালট্যান্ট বলেন, প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরই অনেকের শরীরে আর তেমন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন দেওয়ার পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের গত একমাসে মাত্র পাঁচ জন রোগীকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে হয়েছে। এনোক্সাপেরিন ইনজেকশন প্রয়োগের পর তারা সুস্থ হয়েছেন। এখন কেউ পর্যন্ত কাউকে ভেন্টিলেটারি সাপোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।’

বিআইটিআইডি’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাসান চৌধুরী বলেন, ‘করোনায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে আমরা কিছু বিষয়কে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রিভিয়াস হিস্ট্রি, শরীরে অন্য কোনো রোগের লক্ষণ আছে কি না, হৃদরোগ বা কিডনি জটিলতায় ভুগছেন কি না এবং আক্রান্ত হওয়ার আগে-পরে কী উপসর্গ দেখা যাচ্ছে— এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছি। এর মধ্যে অ্যান্টিবোয়োটিক ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ ব্যবহার করে ৯৫ ভাগ রোগীকেই আমরা সুস্থ করে ফেলতে পারছি। বাকি পাঁচ শতাংশ রোগীর জটিলতা একটু বেশি। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা নির্দিষ্ট লেভেলের নিচে নেমে গেলে তখন অন্য সাপোর্ট লাগছে, সেক্ষত্রে হয়তো দুয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটছে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মঙ্গলবারের সবশেষ তথ্য বলছে, সারাদেশে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯২৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ৭৮৬ জন, যা একদিনের হিসাবে সর্বোচ্চ। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে মারা গেছেন ১৮৩ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৯৩ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে গেছেন। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোট ১ হাজার ৪০৩ জন  সুস্থ হলেন।

সারাবাংলা


Skip to toolbar