আমি এই মর্মান্তিক ঘটনাটি অনেক পরে জেনেছি ।
হতবাক হয়ে হাফেজ আমিন রসুল হুজুর সহ লাশগুলি দেখছি ।
এ যে অনেক কষ্টের ।
যার হারিয়েছ সেই জানে এটা কত ব্যদনাদায়ক ।
যার মৃত্যু হয়েছে সেই জানে এই মৃত্যু কতটা কষ্টের ।
শুধু ভাবছি পৃথিবী কত এগিয়ে যাচ্ছে
আর আমরা সেই তিমিরেই হাবুডুবু খাচ্ছি ।
না বেড়েছে আমাদের সচেতনতা , না হয়েছে
নিরাপদ যাতায়াত ।
১৯৫৬ সনের ২রা জুন মর্মান্তিক বাদুরা জাহাজ ডুবিতে অসংখ্য লোক মারা গেলেন ,
কত শোকের মাতম , কত গান , কত কবিতা !
লাশ খোজাখুজি ।
তারপর সব ধীরে ধীরে থেমে যায়
শুধু কাঁদে পরিবারের মানুষ গুলো ।
যিনি সাগরে পরে মারা গেলেন তার অসহায় পরিবার টিকে ফেলে দিয়ে যান আরেক দুখের সাগরে ।
আরো পড়ুনঃ কালাপানিয়া থেকে ৬ জুয়াড়ি গ্রেপ্তার
কাকতালীয়ভাবে ১৯৭৫ সনের এই দিনে এমনি ট্রলার ডুবিতে আমার নানা সন্দ্বীপের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মৌলভী আজিজুর রহমান ও লন্ডন প্রবাসী চারটার্ড একাউনটেনট নুরুল হক সহ অসংখ্য লোক মারা গেলেন ।
সেদিন ও হ্যালিকপটার এসেছিল , পেপারে হেড লাইন ,
শোকসভা , তারপর ধীরে ধীরে শেষ সব ।
কিন্তু আমরা জানি এ ব্যাথা কত কষ্টের ।
এই শুন্যতা কত গভীর ।
যদিও তখন আমার নানা মৌলভী আজিজ সাহেবের লাশ আর পাওয়া যায়নি।
তারপরে ১৯৮০ সালের নৌকা ডুবিতে টাউনের বিশিষ্ট
ব্যাবসায়ী দ্বীপের বিশিষ্ট ক্রীড়া মোদি জ্বনাব এ আর খদ্দর সাহেবের লাশ সমস্ত সন্দ্বীপ বাসী কে স্তব্ধ করে দিয়েছিল ।
সম্ভবত ২০০০ সালের ১ লা জুন এমন এক নৌ দুর্ঘটনায় সাবেক এম পি মরহুম মোসতাফিজ সাহেবের মা ও বোনের মর্মান্তিক সলিল সমাধি দ্বীপ বাসিকে আবারও স্তব্ধ করে দেয় ।
সেবার ভেবেছিলাম , এবার হযতো আমাদের যাতায়াত ব্যাবস্থা নিরাপদ হবে , উন্নত হবে !
কিছু উন্নত হযেছে ও । তা পয়সাওয়ালা স্পীড বোটের যাত্রীর জন্য । লক্ষ টাকা দিয়ে হেলিকপ্টার ও যায় এখন সন্দ্বীপে ।
কিন্তু ৩০/৫০ টাকার টিকিটের যাত্রীরা ৬০ বছর পরে এসেও এখনো কুলে এসে হাঁটু পানিতে নেমে যেতে হয় !
লালবোট নামক মরন যন্ত্রে চড়তে হয়!
তারপর শুধু যুগ যুগ ধরে শত শত মানুষের সলিল সমাধি আর লাশের মিছিলের ইতিহাস ।
মানুষ মরলো কত শত , রাজাএলো এত এত ,
সবকিছু বদল হলো
দেশ কত উন্নত হলো
শুধু ১৯৫৬ সনের সেই নৌ ঘাট এই ডিজিটাল যুগেও এনালগ রয়ে গেল ।
আবার সেই পুরানো কাহিনি , লাশ খোজাখুজি,তদন্ত কমিটি , শোকসভা , প্রতিবাদ , কান্না , চোখের পানি
কিছু সরকারী সাহায্য ,
তারপর ধীরে ধীরে সব শেষ ।
শুধু যার গেছে সেই কাঁদবে জীবনভর ।
জানিনা এই ১৭টি লাশের বদলে একটা ভাসমান জেটি হয় কিনা ।
১০ টাকার বখশিষ খোর দের হাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষা হয় কি না ?
না কি প্রবাসী দের বা দ্বীপের বড় বড় সব শিল্পপতি দের যৌথ উদ্যোগে এবার একটা ভাসমান জেটি নির্মান করে ইতিহাস সৃষ্টি হয় ! কে দেবে সেই আশা আর ভরসা ??
দ্বীপের শত শত মিলিয়নার আর বিলিয়নার প্রতি এতটুকু আবদার তো আমরা করতেই পারি ??
আমরা এত বছর প্রিয়জন হারানোর কষ্ট নিয়ে দীর্ঘকাল বেঁচে আছি
আমাদের সাথে যুক্ত হলো আরো কিছু স্বজন হারা ভাগ্যহত পরিবার । যারা এ ব্যাদনা বয়ে বেড়াবেন বাকী জীবন ।
হে রাব্বুল আলামিন ,
এই স্বজন হারানো মানুষ গুলিকে এই শোক বহিবার
শক্তি দাও আর সলিল সমাধি মানুষ গুলিকে
জান্নাত বাসী করুন ।
সাগর শাহনেওয়াজ ।
কর্ণধার, সাগর অটোমোবাইলস ।
সন্দ্বীপ জার্নাল/ইএএম