ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সন্দ্বীপের সাত প্রবাসীর পরিবারে নেমেছে শোকের ছায়া। কেউ হারিয়েছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য, কেউ আবার ছোট্ট সন্তানদের নিয়ে দিশেহারা। গ্রামের পর গ্রামজুড়ে এখন শুধু কান্না আর আহাজারি।
চলতি সপ্তাহে ওমানের দুকুম সিদরায় সড়ক দুর্ঘটনায় সাত বাংলাদেশি প্রবাসী নিহত হন। তারা সবাই চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সারিকাইত ও মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা। নিহতদের মধ্যে সারিকাইতের মুন্সিবাড়ির বাবলু (২৯) ও পাশের মনু মিয়ার বাড়ির শাহাবুদ্দিন (২৮) ছিলেন শৈশবের বন্ধু। মাত্র ২১ দিন আগে একসঙ্গে ওমান পাড়ি দিয়েছিলেন—এখন একসঙ্গেই দেশে ফিরছেন লাশ হয়ে।
বাবলুর ঘরে এখন হাহাকার। উঠানে নিরবে খেলছে তার চার বছরের মেয়ে ও পাঁচ বছরের ছেলে—তারা এখনও জানে না, বাবা আর ফিরে আসবেন না। শাহাবুদ্দিনের ঘরে একই দৃশ্য। কোলে চার মাসের নাতনি নিয়ে নিঃশব্দে বসে আছেন বাবা মো. সিদ্দিক। তিনি বলেন, “ওরা একসঙ্গে বড় হয়েছে, একসঙ্গে গেলেও একই দুর্ঘটনায় মারা গেল।”
সারিকাইতের পাশের গ্রামেই আরেক শোকের বাড়ি—রকির (২৪)। সাত বছর ধরে ওমানে ছিলেন তিনি। রকির বাবা মো. ইব্রাহিম বলেন, “১০ মাস আগে দেশে এসেছিল। এখন তার চার মাসের মেয়েটা বাবার মুখটাই আর দেখল না।”
একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আরজু (২৮)–এর তিন বছরের কন্যা আনিসাকে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাবা শহিদুল্লাহ বললেন, “আমার নাতিটা এখন কাকে বাবা ডাকবে?”
মাইটভাঙ্গার জুয়েল (২৮) ও সন্দ্বীপ পৌরসভার মোশারফ হোসেন রনি (২৪) একই মালিকের অধীনে কাজ করতেন। জুয়েলের বাবা মো. জামান বলেন, “ছেলেটা আট মাস আগে দেশে এসেছিল। সরকারের কাছে শুধু দাবি, যেন দ্রুত লাশগুলো ফেরত আনা হয়।”
রনির বাবা আবুল হোসেন বললেন, “নদীভাঙনে পাঁচবার ঘর হারিয়েছি। রনি বলেছিল, একদিন ভালো জায়গায় ঘর করবে—সেই স্বপ্নটা চিরতরে শেষ।”
ওই ট্রলারের মালিক ও সন্দ্বীপের মগধরা ইউনিয়নের আমিন মাঝিও দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তাঁর বাবা কব্বর সেরাং জানান, “আমার ছেলে সারিকাইতের ছেলেদের সঙ্গেই কাজ করত। এক দুর্ঘটনায় সবাইকে হারালাম।”
আমিন মাঝির তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে সুমাইয়া এসএসসি পরীক্ষার্থী, মেজো মেয়ে মুনিয়া সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী এবং ছোট ছেলে আমান তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। এক রাতেই তিন সন্তানের জীবনের সব স্বপ্ন যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
সামো/ইএএম/সন্দ্বীপ জার্নাল