• মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন

সন্দ্বীপে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

সন্দ্বীপ জার্নাল ডেস্ক: / ৫৭৫ ৪ ৯
আপডেট: বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারের অপচিকিৎসা ও অবহেলায় নতুন করে একজনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, গত ২ আগষ্ট (রবিবার) মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলিগ সেক্রেটারি আশরাফ আলীকে ১০৪ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারে নেয়া হয়। করোনার উপসর্গ থাকলেও করোনার স্যাম্পল দিয়ে আইসোলেশনে নেয়ার পরামর্শ না দিয়ে কিছু ইনজেকশন লিখে দিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠান সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক ডাক্তার রিয়াজউদ্দিন রুবেল।

আশরাফ আলীর ছেলে মোঃ রবিন জানান, “চারদিন ধরে যখন বাবাকে ইনজেকশনগুলো দিয়ে যখন কোন উপকার পাইনি, তখন পঞ্চম দিনের মাথায় বাবাকে সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারে পুনরায় নিয়ে যাই। তখন বাবা প্রচ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।”

করোনার উপসর্গ থাকলেও স্যাম্পল নেয়ার কথা কেউ বলেছে কিনা জানতে চাইলে রবিন জানান, “আমাদের সামনে ওনি করোনার নামও মুখে আনেন নি।”

আশরাফ আলীর ভাতিজা মোঃ সজীব জানান, “৫ দিনের মাথায় জেঠুকে যখন সেখানে নিয়ে যাই ওনার অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো, তিনি তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন, সেসময় ডাক্তার আমাকে আরো একটা ইনজেকশন লিখে দিয়ে আনতে পাঠায়। সেই ইনজেকশন দেয়ার মিনিট দশেক পর জেঠু মারা যায়। তারপর ওনার নমুনা নিয়ে দেখা যায় তিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন।”

সজীব আরো বলেন, “৫ দিন ধরে বাড়িতে অন্য রোগের ঔষধ দেয়া হয়েছে আমার জেঠুকে। করোনার উপসর্গ থাকার পরেও স্যাম্পল নেয়া হয়নি, অক্সিজেন সাপোর্ট তো ছিলোই না। এই অপচিকিৎসার কারনেই আমার জেঠুর মৃত্যু হয়েছে ।”

রোগীর মৃত্যু এবং পরবর্তীতে করোনা শনাক্তের বিষয়ে চিকিৎসকের অবহেলাকে দায়ী করেন সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফজলুল করিম। তিনি বলেন, “করোনার এই মৌসুম খুবই স্পর্শকাতর’ সময়। সেই সময় উপসর্গ থাকার পরও স্যাম্পল কালেকশন না করে এই ডাক্তার যে কাজ করেছেন, এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে অপচিকিৎসা এবং অজ্ঞতা। এই দায় কোন মতেই তিনি এড়াতে পারেন না।”

ডাক্তার ফজলুল করিম সন্দ্বীপ জার্নালকে বলেন, “করোনার মৌসুমে ফ্রন্টলাইনে থেকে শত ঝুঁকি থাকার পরেও আমরা পরিশ্রম করে যাচ্ছি, মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি, ঠিক সেই মুহুর্তে বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর এই ধরনের বেপরোয়া মন মানসিকতা, গলাকাটা চিকিৎসা বাণিজ্য এবং অপচিকিৎসার কারণে পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার বদনাম হচ্ছে, বদনাম হচ্ছে সন্দীপের স্থানীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার। সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানুষ যে সুফলগুলো পাচ্ছে সেসব ম্লান হয়ে যাওয়ার পেছনে মূলত এসব বেসরকারি হসপিটালের গলাকাটা বাণিজ্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। এতে সরকারের সফলতা গুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে, গুটিকয়েক ডাক্তারের কারণে ডাক্তারদের উপর, সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা নষ্ট করা হচ্ছে।”

বিষয়টি নিয়ে মাইটভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সন্দ্বীপ জার্নালকে বলেন, “প্রথমত আমরা সেবায় বিশ্বাসী, ডাক্তারদের কাছে আমরা সেবা আশা করি। একটা রোগী যখন অসুস্থ হয় সে ডাক্তারের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে হাসপাতালে যায় কিন্তু আমার ইউনিয়নে যে লোকটি মারা গেলো করোনার সিম্পটম থাকার পরও তাকে পাঁচ টা দিন সময় ক্ষেপন করেছে মেডিকেল সেন্টার। তাকে কেন আইসোলেশনে নেওয়া হয নি! তাকে কেন অক্সিজেন সার্পোট দেওয়া হলোনা? তাহলে কি আমরা ধরে নিতে পারি সেবার বদলে ব্যবসা কে বড়করে দেখা হচ্ছে? একজন ডাক্তার যদি একজন রোগীর মৃত্যুর কারন হয়ে থাকে,ওরা আমাদের জন্য আমাদের সমাজের জন্য আমাদের রাষ্ট্রের জন্য ভয়ানক।”

আরো পড়ুনঃ মুছাপুরে বাড়িতে ঢুকে ছিনতাইকারীর দৃষ্টতা: ছুরিকাঘাতে যুবক আহত

মিজানুর রহমান আরো বলেন, “এদের বিরুদ্ধে প্রসূতিকে ভুল চিকিৎসা,সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়ে দফারফা সহ অগণিত অভিযোগ রয়েছে।এদের রাশ টেনে ধরা খুব জরুরী মনে করছি।এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরাও দীর্ঘদিন ধরে এসব অপচিকিৎসক লালন করে আসছে যার কারনে এসব অভিযোগ এখন ও অব্যাহত।”

সন্দ্বীপ পৌরসভা মেয়র জাফর উল্যা টিটু বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। যদি করোনা উপসর্গ থাকার পরও অবহেলায় পাঁচ দিন রোগীকে ভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিয়ে মৃত্যু বরণ করতে হয় এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। আমি আশা করি তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি খোলাসা হোক। আওয়ামীলিগ হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবেই আমাদের সবার প্রতিবাদ করা উচিৎ ।”

উল্লেখ্য যে, ভুল চিকিৎসায় করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে জানতে সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ রিয়াজ উদ্দীন রুবেলের সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোন সাড়া মেলেনি। হাসপাতালে ফোন করে ডাঃ রিয়াজের বিষয়ে খোঁজ নিলেও তিনি সেখানে নেই বলে জানিয়েছে তারা।

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মোঃ সোলাইমান জানিয়েছেন, “বিষয়টি আমরাও শুনেছি, তবে এখনো আমাদের কাছে কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো ।”

 

সন্দ্বীপ জার্নাল/ইএএম

বিঃদ্রঃ সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে নেমেছে টিম সন্দ্বীপ জার্নাল। প্রিয় পাঠক, আপনাদের কাছে কোন তথ্য,ছবি,ভিডিও কিংবা অডিও থাকলে আমাদের পাঠাতে পারেন, নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা আপনাদের পরিচয় গোপন রাখবো। 


Skip to toolbar